সত্য ঘটনা🎼কালো যাদু

639 Words
আমার শশুর আব্বা হুট করেই একদিন অসুস্থ হয়ে গেলেন। আমার এখনো মনে আছে, আমরা সেদিন বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাবা (শশুর) যাওয়ার আগে থেকে বলছিলেন তার কেমন যেন লাগছে। বিয়ে বাড়িতে আমরা বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। বাবা বলছিলেন তার প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছে। তাই আমরা দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসি। ফিরে আসার পর থেকেই বাবা অনবরত বমি করতে থাকেন। সেদিন রাতে আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি। ডাক্তার এসেছিলেন। এসে কিছু ঔষধ দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। পরেরদিন থেকে হাসপাতাল যাওয়া শুরু হলো, ট্রিটমেন্ট শুরু হলো। কিন্তু বাবার কেন যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারছিলেন না। মাসের পর মাস যেতে থাকলো। ডাক্তাররা সব চেষ্টা করে দেখছিলেন। এরপর ৫ মাসের মাথায় বাবা পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গেলেন। হাটতে পারতেন না, খেতে পারতেন না। যাবতীয় কোন কাজ করতে পারতেন না নিজে থেকে। কথাও বলতে পারতেন না। একদিন রাতে আমার শাশুড়ি আম্মার চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙলো। আমি আর আমার হাসবেন্ড দৌড়ে তাদের রুমে গেলাম। আম্মা (শাশুড়ি) বলছিলেন একটা কালো ছায়া নাকি বাবার শরীরের উপর বসেছিল। আর বাবার গোঙানির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। বলে রাখি আমার হাসবেন্ড এসব কথা একদম সয্য করতে পারতেন না। সেই রাতে আম্মা ভয় পাওয়ার পরেও আমার হাসবেন্ড আম্মাকে বুঝিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। বলতে লাগলেন, "ধুর এসব আজে বাজে জিনিস বকিও না তো। পুরো রুম অন্ধকার আর এই অন্ধকারের মধ্যেও তুমি আবার কালো ছায়া দেখলে কিভাবে?" আম্মা আমাকে আরো কয়েকবার বলেছিলেন তিনি তাদের ঘরের মধ্যে বাবার শরীর বরাবর এক কালো ছায়াকে ঘুরপাক খেতে দেখেন। কিন্তু আমার হাসবেন্ডের জন্য তিনি চুপ থাকতেন। বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতেন তার মুখ বাকা হয়ে গিয়েছিল, ধীরে ধীরে তার পুরো শরীর চিকন হতে যাকে। বাবাকে সামলানোর জন্য দুজন লোক ঠিক করা হয়।তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাজল দিদি। কাজল দিদি সবসময় বাবার পাশে থাকতেন। কিন্তু একদিন রাতে তিনিও আমাদের কাছে ছুটে আসছেন এমন ভাবে আসছেন যেন তাকে কেউ ধাওয়া করতেছে। আমার হাসবেন্ড সামনে থাকায় তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। এরপরের দিনই কাজল দিদি কাজ ছেড়ে চলে গেলেন। কাজল দিদি যেতেই বাবার সব দায়িত্ব আমার উপর পড়লো। তখন বাবা প্যারালাইজড হওয়ার প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। বাবাকে আমি খাইয়ে দিতাম আর রাতের বেলা ঔষধ খাইয়ে শুয়াই দিতাম ঘুমানোর জন্য। একদিন কি যেন কাজে আমার শাশুড়ি তার মায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। বাসায় শুধু আমি আমার হাসবেন্ড আর বাবা। প্রতিদিনের মতো সেদিও আমি বাবাকে রাতে খাইয়ে দিয়ে তাকে শুইয়ে দেই ঘুমানোর জন্য। রাত ঠিক তখন তিনটা আমার কেন যেন ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। হাসবেন্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও জেগে আছে। আমাকে দেখে বললো এক গ্লাস পানি নিয়ে আসার জন্য। আমি পানি নিতে গিয়ে দেখি বাবা হুইল চেয়ারে বসে ডাইনিং টেবিলের সামনে এক জানালা আছে জানালার বাহিরে বাবা তাকিয়ে আছেন। আমি দেখে চিৎকার করে ফেলি। সাথে সাথেই আমার হাসবেন্ড আসে। সেও বাবাকে ওই অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছিল। যেই মানুষটা দেড় বছর ধরে প্যারালাইজড উঠতে চলতে পারে না, নিজে খেতেও পারে না সেই মানুষটা কিভাবে নিজে থেকে উঠে হুইল চেয়ারে বসে হুইল চেয়ার চালিয়ে জানালার কাছে গেলেন! আমি সেদিন খুবই ভয় পেয়েছিলাম। আমার হাসবেন্ড যে কি না খুবই সাহসী সেও সেদিন ভয় পেয়েছিল। এই ঘটনার দুই সপ্তাহের মাথায় বাবা মারা যায়। সেদিন আরেক ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন কাজল দিদি এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম বাবার ঘরটা ভালো মতো পরিষ্কার করে দিতে। তিনি ঘর পরিষ্কার করতে বাবার রুমে গিয়েছিলেন। এরপর আমরা তার চিৎকার শুনি। রুমে গিয়ে দেখি কাজল দিদি কেমন যেন আচরণ করছে। বাসা ভর্তি লোক থাকায় সেখানে একজন বলে উঠলো "তাকে জ্বীন ভর করেছে"। সেখানে এক হুজুরকে ডাকা হলো। হুজুর আমাদের সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। আমরা চলে যাবো তখনই কাজল দিদি আমাদের দিকে তাকিয়ে পুরুষ কন্ঠে বলতে লাগল "ওকে শেষ করেছি না? দেখ তোদের সবাইকে এক এক করে কিভাবে শেষ করে দেই"৷ এরপর আমরা সেখান থেকে সড়ে যাই। হুজুর আমাদের পরের দিন সকালে জানায় যে আমাদের উপর কালো যাদু করা হয়েছে। যে জ্বীনটা ভর করেছিল সে বলেছে নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই একজন আমাদের কালো যাদু করেছে। কাজল দিদি স্বাভাবিক হওয়ার পর দিদিকে জিজ্ঞাসা করি কি হয়েছিল, সে বলেছে ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে বিছানা ছোয়া মাত্র বিছানা থেকে এক কালো ছায়া উঠে তার গলা চিপে ধরে। এরপর তার আর কিছু মনে নেই।
Free reading for new users
Scan code to download app
Facebookexpand_more
  • author-avatar
    Writer
  • chap_listContents
  • likeADD