2087 Words
এটা ভেবে যখন নিজেকে শক্ত করে নিলাম ঠিক তখনই সে আবারও কল দিল । কল রিং হয়ে কেটে গেলো রিসিভ করলাম না। এভাবে চারবার কল বেজে বেজে কেটে গেছে রিসিভ করি নি।পাঁচবারের মাথায় কল উঠিয়ে সালাম দিলাম। সে কোনো রকম সালামের জবাব নিয়েই বলতে শুরু করলো, সমস্যা কি তোর?? তুই কি চাস আমি একেবারেই মরে যাই? সেটা আমাকে বললেই পারিস।নিজের ক্ষতি কেন করতে গেলি? আমাকে বলতি বিষ এনে দিতাম খেয়ে একেবারে মরে যেতিস ?? শুধু বেচে থেকে কষ্ট সহ্য করতে হতো না। আমি চুপ করে শুনছি কিছু বলছি না। উনি আবার ও বলতে লাগলো, কি হলো কিছু বলছিস না কেন?? আমি চুপ করেই আছি। উনি নরম কন্ঠে ডাকলেন, আইশু তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো তাই না?? আমি সরি।সেদিন আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে ছিলাম যে তোমাকে কল দিতে না করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না আমার। ঐদিন ভাইয়ার সামনে যদি এটা না বলতাম তাহলে ভাইয়া তোমার বাসায় এসে তোমার বাবার কাছে বিচার দিতো। আর বাবা তোমাকে মারতো।কি করে মেনে নিতাম সেটা আমি। তাই বাধ্য হয়েছি এমনটা করতে। প্লিজ মাফ করে দাও।প্লিজ কথা তো বল।কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি এবার মুখ খুললাম, বলা শেষ?? এখন রাখি আমার ঘুম পাচ্ছে। এমনিতেই আমি অসুস্থ। আগে বলো......তাকে কথা না বলতে দিয়েই আমি ফোন কাটলাম। জানি কাদবে কাঁদুক। আমিও তো একসপ্তাহ ধরে কাঁদছি তখন তো আমার খবর নেয় নি। তাহলে আমি কেন মেনে নিব? অলওয়েজ আমি কেন কষ্ট পাবো?? শান্তির ঘুম দিলাম অনেক দিন পর। সে অনেক গুলো কল দিয়েছে রিসিভ করলাম না। হঠাৎ কি মনে করে আমি ই তাকে কল দিলাম। কল রিসিভ হতেই সালাম দিলো, আসসালামু আলাইকুম। সে জবাব দিল, ওয়ালাইকুম আসসালাম। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে সে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো?? আলহামদুলিল্লাহ আপনি?? আলহামদুলিল্লাহ ভালো, খাইছো?? হুম,আপনি? হুম,সেদিনের জন্য সরি। হুম, ঠিক আছে। তবে আমি আর কষ্ট পাইনা। আপনার সাথে না কথা বলে থাকতে পারি। আসলে কি জানেন? সেদিন আপনি কল দিতে না করে ভালোই করেছেন। এটা না করলে হয়তো এতো টা শক্ত হতে পারতাম না আমি। সরি তো।আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। ভালোবাসি তোমাকে। ভালোবাসা!! সেটা আবার কি? শুধু মাত্র বাবা-মাই নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসতে পারে। অন্যরা তো নামে মাত্র ভালোবাসে।হয়তো পৃথিবীতে আমিই একমাত্র সবাইকে কারণ ছাড়াই ভালোবাসতে পারি।আর সবার থেকে কষ্ট পাই।তবে আর না আমিও এখন সহ্য করে নিতে শিখে গেছি। হয়তো তাদের কে কষ্ট দিতে পারি না। তবে তাদের থেকে দুরে থাকতে ঠিকই পারি। আমি না হয় দুর থেকেই ভালোবাসবো। তাদের আমাকে ভালোবাসতে হবে না। সে কাঁদছে আর ফুপিয়ে বলছে, আমার ভাগ্য টা এমন কেন আইশু? জানি না। তবে কান্না থামান।নয়তো বাই। সে কান্না থামায়ে বলছে, আমারই ভুল ছিলো। তোমাকে হয়তো আমি পাবো না কখনো। কিন্তু ভালোবাসা টা শুধু তোমার জন্যই থাকবে। আমার যদি অন্য একটা মেয়ের সাথে বিয়ে ও হয়ে যায়। আমি যদি বুড়ো হয়ে যাই তখনও, মরার আগে পর্যন্ত আমার ভালোবাসাটা শুধু তোমারই থাকবে। ভুলতে পারবো না কখনো তোমায়।তুমি বলতেই পারো সেদিন পরে সময় করে তোমাকে কেন কল দিয়ে সবটা তোমায় বুঝিয়ে বলি নি?? কিন্তু আমার ফোন নিয়ে নিয়েছিলো ভাইয়া।আজকে দিয়েছে আর আজই তোমাকে কল দিলাম। আমি ও পারবো না ভুলতে আপনাকে। অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে, বাচ্চা হয়ে গেলে এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার মনের কোথাও হলেও আপনিই থাকবেন ভালোবাসি আপনাকে। এভাবে মাসে দুএকবার কথা হয় আমাদের। তবে আগের মতো আবেগপ্রবণ কেউ ই নেই। জাস্ট বন্ধুর মতো খোঁজখবর নেওয়া হয় আরকি। কিন্তু ধীরে ধীরে আবারও আমি দুর্বল হয়ে গেলাম। সাদাফ বাধ্য করেছে তার প্রতি দুর্বল হতে। মাস থেকে সে এখন প্রতি দিন কল দেয়।একদিন ও নাকি সে থাকতে পারে না আমার সাথে কথা না বলে। তবে ঐ ঘটনার পরে আমি তাকে কল দেই নাই একবারের জন্য ও। কারণ ফোন হাতে নিলেই সেদিনের কথা মনে পড় যায় আমার। কানে বারবার বাজতে থাকে আর কল দিও না আমাকে।ভালো থেকো।ফোনে কলের শব্দে ঘোর কাটলো আমার। কথার মাঝখানে সে আবদার করলো,কাল দেখা করতে পারবে। আমি বললাম পারবো। তবে আপনার আমাকে ট্রেনের রাস্তায় নিয়ে যেতে হবে। সে রাজি হলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু তাড়াতাড়িই বের হলাম বাসা থেকে। দেখা করে তারপর কোচিং এ যাবো। বাসা থেকে বের হতেই পেয়ে গেলাম তাকে।দুজন রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে ট্রেনের রাস্তায় চলে আসলাম। কিছুক্ষণ হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটলাম। হাটতে হাটতে একটা হিজল ফুল গাছের নিচে গিয়ে বসলাম। সে বলল, আইশু দেখ ফুল গুলো কত সুন্দর!! ঠিক তোমার মতো। তুমি কি ফুল বেশি পছন্দ করো?? আমার সব ফুলই প্রিয়।জানেন ছোট বেলায় তো সবাইকে বলতাম?? আমি বড় হলে আমার বিয়ের জন্য যখন দেখতে আসবে তখনই আমি বলে দিব যে, আপনার বাসায় যদি ফুল গাছ থাকে তাহলে আমি বিয়ে করবো নয়তো না। এটা শুনে সবাই হাসতো। সাদাফ হেসে বললো, তুমি হাসার মতো কথা বললে তো মানুষ হাসবেই। এই বলে সে একটা হিজল ফুল নিয়ে আমাকে প্রপোজ করলো। আমি হেসে ফুল টা নিলাম। সেদিন আর কোচিং এ যায় নি। একেবারে স্কুলে গেলাম এভাবে প্রতিদিন ই ফোনে কথা হতো আমাদের। কিন্তু দেখা করা আর হয়ে উঠে নি।সে আমার নাম দিলো আদর।তার ঠিক পরদিন বৃহস্পতিবার ২ টায় স্কুল ছুটি হয়েছে। বাসায় আাসার পথে দেখলাম তাকে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। কোনো এক কারণে মন খারাপ ছিলো আমার। বাসায় এসে মুঠো ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি, আদর তোমার মন খারাপ কেন?? রাতে কল দিব। সাবধানে থাইকো। আমি টেক্সট টা ডিলিট করে ফোন টা রেখে দিলাম। দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমলাম। ঘুম থেকে সন্ধায় উঠে ফোন চেক করে দেখি সাদাফ কল দেই নাই। আমি পড়তে বসলাম। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হাজার বার ফোন চেক করে ও কোনো কল পেলাম না তার। উঠে মাগরিবের নামাজ পড়ে আবার পড়তে বসলাম। ৮ টা বেজে গেছে তাও কোন খবর নাই তার।উঠে অজু করে এশার নামাজ পড়লাম। মোনাজাতে অনেক্ক্ষণ সবার জন্য প্রার্থনা করলাম। নামাজ শেষ পড়া কমপ্লিট করে খেতে গেলাম। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। মনটা কেমন জানি অস্থির লাগছে। কান্না পাচ্ছে খুব। কাদলামও, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের আজানের সময় উঠে নমাজ পড়ে ফোন চেক করলাম কিন্তু সে কল দেই নাই। পড়তে বসলাম, পড়া কমপ্লিট করে সকালের নাশতা খেয়ে বসে বসে একটু টিভি দেখলাম। আজ শুক্রবার তাই বাইরেও যেতে পারবো না। টিভি দেখতে ভালো লাগছিলো না তাই রুমে এসে শুয়ে থাকলাম। সারা দিন যে কতোবার ফোন চেক করেছি তার হিসেব ছাড়া। সারাদিন কান্না করেছি রাতে পড়তে ও বসি নি।পরদিন সকালে দেখলাম সে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু মন খারাপ। হাতে ফোন ও নাই। স্কুল থেকে ফেরার সময় তো কান্না ই করে দিলাম তাকে দেখে। সে দির থেকে দেখছে আমায় তার চোখে ও পানি।বাসায় এসে ফোন চেক করলাম কিন্তু না।কল দেই নি সে। পরদিন আর স্কুলে গেলাম না।সারাদিন অনেক কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেলাম। সন্ধায় সে কল দিল। কল রিসিভ করতেই তার কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। সে কাঁদছে আমিও কাঁদছি।দুজনেই কাঁদছি। এভাবে ১০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর সে কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে কাঁদছো কেন? আমি কেঁদেই যাচ্ছি। সে বললো, প্লিজ কান্না থামাও। আমি কান্না থামিয়ে ফুপিয়ে বললাম, আমি জানি কখনোই আমাদের সম্পর্ক টা কেউ মেনে নিবে না।হয়তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে অন্য কোথাও আর নয়তো আপনার। অলরেডি হয়ে গেছে আদর। কি হয়ে গেছে?? আগে তুমি যা বলছিলে তা শেষ করো।নয়তো আমার কথা শুনে তুমি আর কিছু বলতে পারবে না। না আগে আপনি বলবেন। না তুমি বলো। আপনি বলবেন কি না?? আমাদের জেদের কাছে বাধ্য হয়ে সে বলতে শুরু করলো, আদর আমার বাসার সবাই জোর করে অন্য একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে করিয়ে দিয়েছে। তবে এখন সে তার বাড়িতে আছে ৬ মাস পড়ে উঠিয়ে আনবে। বলেই সে কাঁদতে লাগলো। আমি যেনো বিশ্বাস করতে পারলাম না কথা গুলো। কান্না থামিয়ে একদম চুপ হয়ে গেলাম। সে কাঁদছে তো কাঁদছেই। অনেক ভালোবাসি আইশু। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। নিজের খেয়াল রাইখো। আর সবসময় হাসিখুশি থাইকো।মনে রাখবা তোমার হাসির মধ্যেই আমি ভালো থাকি। আর কখনো কোনো রিলেশনে নিজেকে জড়াবে না বুঝলে। আব্বুর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবে কেমন? আর কাদবা না কেমন? তুমি কাঁদলে আমি কষ্ট পাই আইশু। আমার আদর তুমি। আমি কিছুই বলতে পারছি না। আমার সব না বলা কথা আর কান্না গুলো গলায় এসে আটকে যাচ্ছে। একটা টু শব্দ ও করতে পারছি না। কেউ যেন আমার গলা টা শক্ত করে চেপে ধরেছে। যেন আরেকটু হলেই দমবন্ধ হয়ে মরে যাবো। সে অবিরত কেঁদেই যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না আমি কার দোষ দিবো। তার নাকি আমার ভাগ্যের?? জানো আইশু, আমি ভাইয়া ভাবিকে অনেক বলেছি তোমার কথা। তাড়া শুনতে চাইনি। আমি তোমাকে কল দিতে ও চেয়েছি। কিন্তু তারা আমার ফোন টাই কেড়ে নেয় সেদিন বাসায় যাওয়ার পর। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত বাইরে বের হতে দেইনি আমায়।আমাকে ভুলে যাও আইশু। দোয়া করি অনেক অনেক ভালো একটা ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হোক। এবার আমি মুখ খুললাম, আমি কখনো বিয়ে করবো না সাদাফ।আমি কথা দিয়ছিলাম আপনাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। সো করবই না।এইটুকু বলেই কল কেটে দিলাম। কষ্টে বুকের ভেতরটা ছিড়ে যাচ্ছে। তাও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলাম। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই কান্নায় ভেঙে পড়লাম। কষ্ট গুলো যেনো আর বাঁধ মানতে চাইছে না। এত পরিমাণ কাঁদলাম যে আমার ফেস দেখে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে। ছোট বোন এসে দুই গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে বলতে লাগলো, কি করছিস তুই? এভাবে কাঁদলে তো মরে যাবি।আর কত কাঁদবি ঐ ফালতু ছেলের জন্য। আগেই বলেছিলাম ঐ ছেলের সাথে কথা না বলতে। এখন দেখলি তো?? রেডি হয়ে নে ঘুরতে বের হবো তোকে নিয়ে। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো তৈরি হয়ে গেলাম সবার সাথে ঘুরতে। আর ভাবছি আমিই মনে হয় এ পৃথিবীতে প্রথম যে কিনা ছোট বোনের হাতে চড় খায়। ঘুরাঘুরি শেষ করে বাসায় এসে কোন রকম হালকা খেয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই মুঠো ফোনটা বেজে উঠায় চমকে উঠলাম। হাতে নিয়ে দেখি সাদাফ কল করেছে। রিসিভ করে সালাম দিলাম। সে শান্ত কন্ঠে সালামের জবাব নিয়ে বলতে লাগলো, কেমন আছো?? যেমন রেখে গিয়েছেন তেমনি। আমাকে জিজ্ঞেস করবে না কেমন আছি?? জানি ভালো আছেন তাই প্রয়োজন নেই জিজ্ঞেস করার। ওহ, এভাবে কথা বলছো যে। আমি একটু রাগ দেখিয়ে বললাম, এনাফ ইজ এনাফ সাদাফ।আমার দোষ টা কোথায় ছিল? অন্য কারোর থেকে ছেকা খেয়ে আমার উপর কেন রিভেঞ্জ নিলেন? আমি দুষ্টুমির ছলে একদিন ছ্যাঁকা খোর বলেছিলাম সেটার রিভেঞ্জ নিয়েছেন তাইতো? কিন্তু সামান্য একটা কথার প্রতিশোধ এতটা তীব্র ভাবে না নিলেও পারতেন সাদাফ। আমি মরে যাচ্ছি। এইটুকু বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম। কেঁদো না প্লিজ। আমি জানি তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আমাকে এতোক্ষণে বকতো কি হাতের কাছে পেলে খুন ও করতো। কিন্তু তুমি পারো না। যেইটুকু বলেছো সেটা তোমার বলার প্রয়োজন ছিল। এতে তোমার কষ্ট কিছু টা হলেও কম হবে। সেদিন কথা শেষ করে দুজনই অনেক কেঁদেছিলাম। সে এখনো আগের মতোই আমাকে দেখতে দাড়িয়ে থাকে তবে আমি তাকাই না। এরই মধ্যে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে আসলো। তার পরিবার তার বউকে বাসায় উঠিয়ে আনলো।আমি পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যাস্ত। প্রথম পরীক্ষার দিন সকালে সে টেক্সট দেয়, বেস্ট অফ লাক আইশু।ভালো করে পরীক্ষা দাও আর নিজের সপ্ন পূরণ করো। আমি টেক্সট ডিলেট করে ফোন রেখে দিলাম। ধীরে ধীরে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কলেজে ভর্তি হলাম সে এখনো দাড়িয়ে থাকে বাসার সামনের রাস্তায়। মাঝে মধ্যে আমার ও চোখ পড়ে যায় তার উপর। কিন্তু সাথে সাথেই সরিয়ে নেই আমি।আমার কোন অধিকার নেই তার চোখের মায়ায় নিজেকে জড়ানোর। আর না আছে তার চোখে চেয়ে সেই মায়া থেকে বরুনোর উপায়। তাই না তাকানোটাই বেস্ট। এভাবে কেটে গেলো আরো দুটো বছর। এই দুই বছরে সে একবারও আমাকে দেখতে আসতে ভুলে নি। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে গেলাম। ইচ্ছে করছিল তাকে কথা টা বলতে কিন্তু সেদিন সে আর আসে নি। আমার একটু চিন্তা হলো। দুই বছরে তার সাথে আমার সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সে প্রতিদিন আমাকে দেখতে এসেছে। আজ হঠাৎ কি হলো। এক সপ্তাহ খুঁজে ও তার দেখা আর পেলাম না। এদিকে ভার্সিটিতেও ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। তাই ঢাকায় চলে আসলাম। অনার্স শেষ করে একবছর মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করলাম। নতুন কাজ নতুন স্কুল বেশ ভালোই কাটতে লাগলো দিনগুলো। কেজিতে পড়ে একটা স্টুডেন্ট কে ভীষণ ভালো লাগে আমার। তার জন্মদিন আজ। সেখানেই যাচ্ছি। বাচ্চা ছেলেটা ভীষণ ভালোবাসে আমায়। তার নাম আদর। আদর নামটা শুনেই প্রথমে চমকে উঠে ছিলাম আমি।পর মুহুর্তে মনে হলো।থাকতেই পারে এই নাম।এসব ভাবতে ভাবতেই আদরদের বাসায় চলে এলাম আমি। আদর আমাকে দেখে ভীষণ খুশি। ছোট্ট ছোট্ট হাতে আমার হাত ধরে বললো, ম্যা’ম তলো তুমাতে পাপ্পাত কাথে নিয়ে দাই। সোনা আগে মায়ের কাছে নিয়ে চলো। মমতে তো অনেত দেততো। পাপ্পাতে দেতবা এখন। হাত ধরে নিয়ে এক ভদ্রলোকের পিছন থেকে হাত ধরে ডেকে বললো,পাপ্পা দেতো কিউতি ম্যা’ম আসছে। ভদ্রলোক পিছন ঘুরতেই অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, আইশু তুমি?? ছয় বছর পর দেখছি তাকে। আমি ও অবাক হয়েছি। তবে তা প্রকাশ না করে সালাম দিলাম। সে সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো?? এইতো আলহামদুলিল্লাহ, আপনি? কথার মাঝেই তার স্ত্রী প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ কথা বলে সে চলে গেল। সাদাফ বলতে শুরু করলেন, একদম আগের মতোই আছো। শুধু চঞ্চলতা টা হারিয়ে গেছে। আমি কিছু বললাম না। সেই আবার জিজ্ঞেস করলো, বিয়ে করো নি?? আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালাম। কিছু বলতে যাবো তার আগেই আদর বলে উঠলো, কিউতি ম্যা’ম এততা দান থুনাও না। আমি ওকে কুলে নিয়ে গাইতে শুরু করলাম, লক্ষীসোনা আদর করে দিচ্ছি তোকে, লক্ষ চুমু মায়া ভরা তোরই মুখে। হো..... লক্ষীসোনা আদর করে দিচ্ছি তোকে, লক্ষ চুমু মায়া ভরা তোরই মুখে। কলিজা তুই আমার, তুই যে নয়নের আলো। লাগে না তুই ছাড়া, লাগে না যে ভালো। রূপকথা তুই তো আমারি, জীবনের চেয়ে আরো দামি (।।) কোনো রকম অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় আসলাম।
Free reading for new users
Scan code to download app
Facebookexpand_more
  • author-avatar
    Writer
  • chap_listContents
  • likeADD