Untitled
গল্পঃ বিচ্ছেদ?
লেখনীতেঃ আয়েশা আক্তার লাবনী
আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সাথে দেখা। তার সাথে আমার সম্পর্ক টা কেমন এক অদ্ভুত সম্পর্ক। সম্পর্ক টা ঠিক প্রেম ও নয় আবার বন্ধুত্ব ও নয়। আবার শত চেষ্টা করে আমি তাকে ঘৃণা ও করতে পারি না। হয়তো অনক বেশি ভালোবাসি তাই।সেও হয়তো আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আবার হয়তো বাসেও না। কারণ আমি ছাড়া ও তার জীবনে অন্য একজন আছে। তবে এক সময় সে প্রচুর ভালোবাসতো। সে হয়তো নিজের ইচ্ছে তে বিয়ে টা করে নি কিন্তু এত বছর একসাথে থাকার জন্য হলেও ভালোবাসা টা হয়তো তৈরি হয়েছে মেয়েটির প্রতি তার।যাইহোক, তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল কোনো এক চৈত্র মাসের প্রচন্ড রৌদ্রময় একটি দিনে। তখন আমার বয়স মাত্র পনেরো। তার বয়স হয়তো সতেরো বা আঠারো ছিলো। প্রথম দেখাতেই নাকি তার আমাকে ভালো লেগেছিল। সে আমার সাথে কথা বলতে চাইতো।আমি হ্যাঁ, হু,উত্তর দিতাম। কখনো আবার এবোয়েট ও করতাম। সে কষ্ট পেতো আমার সামনে প্রকাশ করতো না।সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো দুর থেকেই আমার খেয়াল রাখতো।আমি খাবার খেয়েছি কিনা, ঠিক সময়ে ঘুমিয়েছি কিনা সব রকম খবরই রাখতো সে আমার। প্রথম দিকে আমি অনেক বিরক্ত হতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে তার এই বিষয় গুলো আমার ভালো লাগতো। সে অন্য আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে,কথা বললে আমার কষ্ট হতো। হঠাৎ একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলতে তাকে প্রায় ই দেখতাম। কষ্ট হলেও নিজেকে এই বলে শান্তনা দিতাম যে, সে তো আমার কেউ না সে একটা নয় হাজারো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকুক, কথা বলুক আমার কি???
এভাবে কিছু দিন তাকে এভয়ড করে চলার পরও সে আমাকে কখনো ইগনোর করে নি বরং। দুর থেকেই আমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে।হঠাৎ দেখি একদিন সে একটা আপুর সাথে কথা বলছে তাও আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। তখন তার ভীষণ রকম মন খারাপ ছিল। সে আমার দিকে পলকহীন তাকিয়ে ছিল। আমার ভেতর জলছিলো কষ্টে।ইচ্ছে করছিলো, তাকে কয়েকটি থাপ্পড় দিয়ে বলি,কি পেয়েছেন টা কি?? আড়াল থেকে আমাকে দেখবেন, আমার সকল খেয়াল ও রাখবেন, আবারও অন্য মেয়েদের সাথে মাখামাখি ও করবেন?? এটা হতে পারে না। আমার দিকে তাকালে শুধু আমাকেই দেখতে হবে। অন্য কারো নাম ও মুখে আনা যাবে না। আর আপনি কি না অন্য মেয়েদের সাথে মাখামাখি করছেন?? আর কখনো তাকাবেন না আমার দিকে। এসব ভেবে বাসায় গিয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়ছি।রাতেও উঠি নি খাইও নি।আব্বু খাবার খেতে ডাকলেও যায়নি খেতে। আব্বু ও বেশি জোর করে নি সেদিন ভেবেছ আমার ভালো লাগছে না খেতে। সকালে ঘুম ভাঙতেই আব্বুর ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি, বাংলায় একটা টেক্সট।
"এই পিচ্চি, তুমি কি চাও আমি মরে যাই?? আমাকে এভয়েড করো,ইগনোর কর প্রবলেম নাই। প্লিজ নিজেকে কষ্ট দিও না।খাওনি কেন সারাদিন। জানো আমি ও কিছু খেতে পারি নি। আর কখনো না খেয়ে থেকো না প্লিজ।"
টেক্সট টা ডিলিট করে আব্বুর ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলাম স্কুলে যেতে হবে। স্কুলের জন্য তৈরী হয়ে বাসা থেকে বের হতেই দেখলাম দুরে দাড়িয়ে আমাকে দেখছে নিজের অজান্তেই মুখে একটা হাসি ফুটালাম।সেও হাসলো মনে হলো।স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।সবগুলো ক্লাস কমপ্লিট করে বের হলাম। বাসার সামনের রাস্তায় আসতেই কেমন একটা অস্থির হয় উঠলো মন টা। এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করলাম। পেয়ে ও গেলাম। কিন্তু তাকে দেখা মাত্রই বুকের ভেতর টা কেমন চুরমার হয়ে গেলো। সে আবারও সেদিনের সেই আপুটার সাথে কথা বলছে। তার মন খারাপ ঠিকি কিন্তু আপুটা হেসে হেসেই কথা বলছে। আমি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তার দিকে এক নজর তাকিয়ে বাসায় চলে আসলাম। সেদিন ই প্রথম বুঝতে পারলাম আমি তাকে ভালোবাসি। কিন্তু আব্বু কেও ভীষণ রকম ভালোবাসি। আমি কি করে এদের দুজনকে কষ্ট দিতে পারি।তাই সারা রাত কাঁদলাম। একটুও ঘুমাইনি। তিন দিন একটানা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। বাসা থেকে ও বের হয়নি। তিনদিন পর হঠাৎ কি মনে করে আব্বুর ফোন টা এনে তাকে কল দিলাম।
সে কল কেটে কল ব্যাক করলো।আমি ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই সে বললো,
আইশু ৫ মিনিট পরে কল দেই প্লিজ?আমার সাথে ভাইয়া-ভাবি, বাবা-মা সবাই আমার সাথে বুঝলা? জাস্ট পাঁচ মিনিট ওয়েট করো।
একশব্দে ওকে বলেই ফোন রাখলাম। যাহ বাবা!! ভেবেছিলাম একটু রাগ দেখাবো।বলবো, আমার দিকে আর কখনো না তাকাতে। আমার সমস্যা হয় উনি তাকালে।কিন্তু এটা কি হলো?? উনার মুখে আইশু ডাক শুনে রাগ গুলো কেমন চলে যাচ্ছে আসতে আসতে। কলের শব্দে ঘোর কাটলো আমার। ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সালাম দিলো সে,
আসসালামু আলাইকুম।
আমিও সুন্দর করে জবাব দিলাম,
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
তারপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ।আমি নিরবতা ভেঙে বললাম,
সাদাফ ভাইয়া কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে। অনুমতি দিলে বলতাম আরকি।
সে হঠাৎ করেই ধমক দিয়ে,
ঐ কি মনে করো নিজেকে?? হুম?যখন ইচ্ছে এভয়েড করবা?? ইগনোর করবা? সব মেনে নিলাম কিন্তু এখন আমি তোমার ভাই হয়ে গেলাম? মানলাম তুমি একটু পিচ্চি তবে একেবারে বাচ্চা তো নও তুমি। তাহলে কেন এমন করো??
আমি অবাক হয়ে শুনলাম সবটা,যাহ বাবা!! কই আমি তাকে ইচ্ছে মতো বকা দেওয়ার জন্য কল দিলাম এখন সেই আমাকে বকছে। দাড়া মজা দেখাচ্ছি।
ঐ মিয়া আপনি কি মনে করেন নিজেকে? হুম? কই আমি আপনাকে বকা দিতে কল দিলাম এদিকে আপনিই আমায় বকছেন? হাও ফানি??
সে ঠান্ডা কন্ঠে জবাব দিল, সরি।এখন বকো যতখুশি কিন্তু ভাইয়া বলবে না।
আমি রাগ দেখিয়ে, অবশ্যই ভাইয়া বলবো। আপনি আমার থেকে বয়সে বড় তো আমি তো তুই তুই করে বলতে পারি না? ভাইয়া করেই বলতে হবে।
সে কিছু বললো না হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি রেগে আছি তাই। আমি আবারও বলতে শুরি করলাম, শুনুন সাদাফ ভাইয়া। আপনি আমার অতি আদরের ভাবি গুলোর সাথে মাখামাখি করতেই পারেন। এতে আমার কিছু আসে যায় না। দয়াকরে আমার বাসার সামনে এসে মাখামাখি না করে তাদের বাসায় কিংবা আপনার বাসায় নয়তো অন্য কোথাও গিয়ে করবেন। বাংলাদেশে অনেক জায়গা আছে।
সাদাফ মুখ টিপে হাসলো। তবে প্রকাশ করলো না।সে দুষ্টু বুদ্ধি খাটিয়ে বললো, ওহ তাইতো? ঠিক আছে তবে আমার তো তোমাকে ও লাগবে ওদের সাথে যদি অন্য কোথাও গিয়ে মাখামাখি করতে চলে যাই তাহলে তোমাকে দেখবো কি করে? তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি না। জানো এই তিন দিন কত টা দমবন্ধ পরিস্থিতির সামনে ছিলাম? নিজেকে জীবিত রাখাই কষ্টকর হয়ে গেছে আমার।
আমি আরো রেগে গেলাম।রাগে কি বলতে কি বলবো সব গুলিয়ে ফেলছি। রেগে গলা উচিয়ে বলতে লাগলাম,
একদম চোখ কানা করে রেখে দিব বলে দিলাম। অন্য কারো দিকে তাকালে।এতো সাহস কোথায় পান আপনি অন্য কারো দিকে তাকানোর??
সে শান্ত কন্ঠে বললো, ভালোবাসি আইশু।প্লিজ আর এভয়েড করো না।কষ্ট হয় ভীষণ। আর কারো দিকে তাকাবো ও না, প্রমিজ।
এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম আমি কি বলে ফেলছি।থাক আর লুকিয়ে লাভ নেই (মনে মনে) । ইশ শখ কতো আপনার?? অন্যদের সাথে মাখামাখি করে এখন আসছেন ভালোবাসা দেখাতে??
আরে তুমি ভুল বুঝছো আমাকে। উনি আমার দূরসম্পর্কের একজন ভাবি হয়।বড় বোনের মত আমার। আর উনি জানে আমি তোমাকে পছন্দ করি। উনার সাথে তোমাকে নিয়েই কথা হয় আমার।
তাহলে কিছুদিন আগে যে একটা মেয়ের সাথে আপনাকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলাম সে কে??এখন আবার এটা বইলেন না যে সে আপনার আরেকটা ভাবি।
আরে ও আমার ভাবি হতে যাবে কেন?? ও তো আমার আপুর মেয়ে। আমার একমাত্র ভাগ্নী। ওয় ও তোমার কথা জানে। তোমাকে দেখতেই এসেছিল ও।
সেদিনের মতো কথা বলে ফোন রাখলাম শুরু হলো আমার জীবনের এক নতুন মোর।এখন সে যখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমাকে দেখে।আমিও তাকে দেখি।তাকে দেখলেই অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব হয় মনে। সাথে লজ্জা ও লাগে। এভাবে ভালোই দিন গুলো কাটছিলো আমাদের। সারাদিন পর সন্ধায় ৪/৫ মিনিট তার সাথে কথা বলে পরতে বসা যেনো নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমার। প্রতিদিন ৫ মিনিট কথা বলাতেই যেনো অনেক আনন্দ পেতাম আমি।কিন্তু কথায় আছে না সুখের দিনগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না।