প্রেমিকাকে কালো যাদু করেছি আমি।
তবে এর ফলাফল এতো ভয়ানক হবে। তা আমার ধারণার বাহিরে ছিলো। কি বা করতাম। আমার ৮ বছরের প্রেম। সব ভুলে গিয়ে সে অন্য একটা পুরুষকে, বিয়ে করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি শুধু তাকে চেয়েছি। অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয়েছি। তখন ব্লাক ম্যাজিকের সাহায্য নিতে হয়েছিলো। জানতে চান? মূল ঘটনা?
আজ থেকে ২ মাস আগের কথা। হটাৎ সে কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলো। আমি প্রথমদিন এটি তেমন আমলে না নিলেও।পরেরদিন সন্দেহ হয়। ফোন বন্ধ,কলেজেও আসেনা। বাধ্য হয়ে তার বান্ধুবীর কাছে জিজ্ঞেস করেছি। নিপার ( ছদ্মনাম) বান্ধুবী আমাকে জানায়,নিপা পরশু সন্ধায় দেশের বাড়ি চলে গেছে। আমি রীতিমতো অবাক হলাম। আমাদের মাঝে ঝগড়াও হয়নি। এইভাবে না জানিয়ে সে কিভাবে গেলো। আবার ভাবলাম,হয়তো ফ্যামিলিগত কোনো সমস্যা হয়েছে। কিন্তু একটা কল তো করতে পারতো। নিজেকে শান্ত অশান্ত করার মাঝে, সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওদের বাড়ি যাবো। স্কুল জীবন থেকে প্রেম। আমার পাশের এলাকাতেই তাদের বাড়ি। আমি কলেজে ভর্তির জন্য ঢাকায় এসেছি জেনে,নিপাও ঢাকা এসেছে।সব তো ঠিকঠাক ছিলো।তবে নিপা এমন করার কারণ কি। জানতে আমি সেদিন রাতেই গ্রামে রওনা করি।
হটাৎ বাড়িতে আসায় আম্মা আব্বাও অবাক হয়। আমি কাওকে কিছু না বলে,সকাল সকাল নিপাদের বাড়ির দিকে রওনা করেছি। নিজের এলাকা পেরিয়ে তাদের এলাকাতে যাই। আর দেখতে পাই,একটি বিয়ের গেট।
আমার স্থানে যেকোনো ছেলে থাকলে,এই অনুভূতিটা উপলব্ধি করতে পারবে। কতটা যন্ত্রণা এটিতে।তা একটা ছেলের চেয়ে বেশি কেও জানবেনা। নিপার কোনো ভাই/বোন নেই। এই বাড়িতে যদি কোনো বিয়ে হয়,তবে তা নিপার। আমি হতভাগ হয়ে বাড়ির দিকে প্রবেশ করতেই যাচ্ছিলাম।কিন্তু নিপার সাথে দেখা হয়ে গেলো উঠোনে। নিপা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে বাড়ির বাহিরে। আমি শুধু তাকে দেখছিলাম।আমাকে কিছু বলতেও দেয়নি। বাড়ির বাহিরে এনে নিপা আমাকে মিষ্টি স্বরে বলতে থাকে,
- শুনো রাফি ( ছদ্মনাম) । আমি তোমাকে না বলে এসেছিলাম।যাতে তুমি কোনো সমস্যা না করো। আমাদের মধ্যে যা ছিলো সব ভুলে যাও।আজ আমার গায়ে হলুদ। তুমি আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পাবে। দয়া করে কোনো ঝামেলা করিওনা।চলে যাও।
- এসব কি বলছো নিপা। তোমার মাথা কি ঠিক আছে? ৮ বছর ধরে ভালোবাসি তোমাকে। হুট করে তুমি বলছো সব ভুলে যাবো? তাও এতো সহজে?
- রাখো ওসব ভালোবাসা। তুমিই বলো? কি আছে তোমার? এখনো অনার্সের ফাইনাল দাওনি। কবে তুমি চাকরি ধরবে,আর কবে বিয়ে করবে। আমি হয়ে যাচ্ছি বুড়ি। আব্বু ছেলে দেখেছে। ছেলের বিদেশে বিজনেস আছে। বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে। প্লিজ,দয়া করে আমার ক্যারিয়ার খারাপ করিওনা।এমন ছেলে আমি কোনোদিন পাবোনা।
- নিপা? তুমি সত্যিই ঠিক আছো? আর আমি কি স্বপ্ন দেখছি? এসব তুমি নিজের মুখে আমাকে বলছো? কিভাবে নিপা?
হ্যাঁ,সেদিন আমি যেমন অবাক হয়েছি।তেমনি কেঁদেছি। নিপার পা ধরে অনুরোধ করেছি।নিপা আমাকে পাত্তাও দেয়নি। আমি বার বার নিপাকে বুঝাতে চেয়েছি।কিন্তু নিপা আমাকে তার ক্যারিয়ারের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছিলো। শেষে সে রাগ দেখিয়ে আমার বুকে লা"থি মারে। শুরু করে আমার উপর চিৎকার চেঁচামেচি।নিপার চিৎকারে ওর বাবা,চাচাতো ভাইয়েরা সবাই দৌড়ে আসে। আমাকে প্রচুর মা"রধ"র করে। কারো লা"থি,কারো ঘু"ষি। নাক মুখ ফে"টে র'ক্তা"ক্ত হই। ক্ষ"ত শরীর নিয়ে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে। যদিও দেহের ক্ষতটার চেয়ে,আমার অন্তরের ক্ষতটা বেশি যন্ত্রণা দিয়েছে।
আমি প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। মানুষ কিভাবে মুহুর্তে তার রুপ বদলাতে পারে। গত ৮ বছরে মনে হয়েছিলো,এই মেয়ে সবার থেকে আলাদা।ওর মতো কেও হয়না।সবাই ছেড়ে চলে যায়,কিন্তু নিপা যাবেনা। নিপার মতো কেও আমাকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারবেনা। সেই নিপা আজ আমার বুকে লা"থি মে"রে,অন্যের বিছানায় যেতে প্রস্তুত। আমি কোনোভাবেই নিজেকে বুঝাতে পারছিলাম না। ও কি সত্যিই আমার সেই নিপা? যাকে আমি এতো বছর ভালোবেসে এসেছি?
আমার এই হাল দেখে,গ্রামে থাকা আমার এক বন্ধু আমাকে সাপোর্ট করেছে। সে আমাকে বুঝায়।কিন্তু আমি কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারিনি। ফাইনালি বন্ধু আমাকে কালো যাদুর ব্যাপারে বলে। এটি করলে নাকি নিপা ফিরে আসবে। কোনোভাবে নিপা এলে যদি, আমি তাকে বিয়ে করে ফেলি।তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা। ঐ সময়টাতে আমার কাছে আর কোনো পথ ছিলো না। তবে রায়হান ( ছদ্মনাম) আমাকে কোনো কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়নি। আমার বন্ধু নিজেই কালো যাদু নিয়ে কাজ করতো। দুপুরেই আমাকে সে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওর রুমে কিছু না থাকলেও,খাটের নিচ থেকে একটা বক্স বের করে। সেই বক্সে রয়েছে অসংখ্য কালো যাদুর জিনিষপত্র। রায়হান বক্স থেকে জিনিষপত্র নামিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়। যদিও আমি নিজের ইচ্ছেতে এসেছি।কিন্তু ভয় করছিলো আমার। রাগ বা ভালোবাসা অর্জনের ইচ্ছে আছে।তবে ভয়টা এখানে আসার পরে করছে।এখন অন্য কোনো পথও নেই। নিপাকে ছাড়া আমি একদিনও ভাবতে পারবোনা।
রায়হান দরজা জানালা বন্ধ করার পর,রুমে চারটা মোমবাতি জ্বালায়। এক পাশে আমাকে বসায়,অন্য পাশে রায়হান বসে। বক্স থেকে বের করা কিছু সুতো রাহয়ান আমার হাতে বেঁধে দেয়। এরপর একটা বোতল থেকে কিছু পানি আমার গায়ে ছিটিয়ে দেয়। এগুলা শেষ করে রায়হান আমাকে বলে," এই পানিগুলা নাপাক পানি। মানে মানুষের মূত্র। আর সুতোটা মৃত মানুষের হাড্ডিতে ২১ বেঁধে নাপাক করা হয়েছে। এখন আমরা যে জ্বীনকে ডাকবো। সেই জ্বীন নাপাক স্থান পছন্দ করে।আর নাপাক মানুষের সাহায্য করে। আমি এখন মন্ত্র উচ্চারণ করবো।আমার সাথে সাথে তুই'ও সেই মন্ত্র উচ্চারণ করবি। যখন মোমবাতি নিভে যাবে,তখন তুই আমার কাছে সাহায্য চাইবি। শুধুমাত্র একটা ইচ্ছে পূরণ করবে সে। এর বিনিময়ে যদি সে তোর কাছে কিছু চায়। তুই সেটি দিতে রাজি হবি। আর যদি দিতে না চাস।তাহলে বলবি তুই তোর যাদু বন্ধ করতে চাস"।
এইটুকু বলে রায়হান একটা কিতাব হাতে নেয়। এরপর কিতাব দেখে দেখে কিছু মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করে( মন্ত্রগুলা আরবিতে। সমস্যা হবে তাই আমি উল্লেখ করছিনা)। সে একটা শব্দ বলে,সাথে সাথে আমিও সেটি উচ্চারণ করি। এইভাবে কিছু সময় পার করার পর,আমার চোখের সামনেই মোমবাতি নিভে যায়।
দরজা জানালা বন্ধ থাকলেও,বাহিরের আলো মোটামুটি রুমে ছিলো। সেই আলোতে আমি রায়হানকে দেখতে পাচ্ছিলাম। রায়হান আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে," বল তোর কোন ইচ্ছে পূরণ করবো"।
আমার কাছে এইবার ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হলো। কোনোভাবে এসব ভূয়া না'তো? রায়হান কি আমাকে বোকা বানাচ্ছে? শান্তনা দেওয়ার জন্য এসব করছে? কিন্তু তবুও আমি আমার ইচ্ছের কথা বলি। ভূয়া হোক আর সঠিক। করতে যেহেতু এসেছি,করেই ফেলি। আমি ভীত স্বরে রায়হানকে বললাম," আমার প্রেমিকা নিপার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই,সে আমাকে বিয়ে করুক।আমার জন্য পাগল হয়ে যাক। আমার কাছে ছুটে আসুক"। আমার আবদার শুনে রায়হান আবার গম্ভীর স্বরে বলে," ঠিক আছে। কিন্তু এর বিনিময়ে আমাকে কারো জী'বন দিতে হবে। কাকে হ'"ত্যা করে তুই তোর প্রেমিকাকে চাস"। সত্যি বলতে,তখনো আমার কাছে এটি মিথ্যে মনে হচ্ছিলো।কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী আমিও বললাম," ওর চাচাতো ভাইয়ের জীবন নিয়ে,নিপাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন "।
চলবে.....?