যেদিন আমার ক্রাশকে প্রথম দেখি তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারিনি। তার ফলস্বরূপ ড্রেনের মধ্যে গেলাম পরে। আর আমার শয়তান বান্ধবী আমাকে না তুলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে খেতে সেও আমার মতো ড্রেনের মধ্যে চিৎপটাং।
ক্রাশ আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। কি লজ্জা জনক ব্যাপার ভাবা যায়?
একদিন ক্রাশ কে দেখিয়ে একটা ফকির কে ভিক্ষা দিচ্ছিলাম।
পাশ থেকে এক বন্ধু বলে উঠলো,, কি রে মিশমি তুই তো জীবনে ফকির কে দুই টাকা পর্যন্ত দিস না। আর আজকে বিশ টাকা দিচ্ছিস কি ব্যাপার বলতো?
মনডায় তখন কইতাছিল,, আল্লাহ তুমি দ'ড়ি ফেলাও আমি উপরে উঠে যাই।
যতবার দেখা হইছে তার সাথে ততবার এমন ঘটনাই ঘটছে।
তাই আজকে ক্রাশ কে বাদ দিয়ে। ক্রাশের বাড়ি যাচ্ছি আমার ভবিষ্যৎ শশুর শাশুড়ীকে পটাতে। বন্ধুদের লাগিয়ে খবর নিয়েছি আমার ক্রাশ নাকি এই সময়ে বাড়ি থাকে না। আমার বাড়ি থেকে ক্রাশের বাড়ি বেশি দূরে না। কয়েক বিল্ডিং পরেই। মাস খানেক ধরে ভাড়া নিয়েছে তারা।
নাচতে নাচতে সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় এক টাকলা লোকের সাথে খেলাম ধাক্কা। লোকটাকে কিছু বলতে চেয়েও বললাম না। আমার ক্রাশের বাবা মা যদি জানতে পারে তার ছেলের বউ ঝগরুটে তাহলে তো তারা আমাকে মেনে নিবে না। তাই কিছু না বলে চলে আসলাম।
লোকটি কিছু একটা হয়ত বলছিল। যাইহোক ওসব দিকে মাথা না দিয়ে আসল কাজে লেগে পড়লাম।
কলিং বেল দেওয়ার আগেই দরজা খুলে গেলো। সামনে তাকিয়ে আমি হা হয়ে গেলাম দেখি একটা ডা'ম আই'মিন আনুমানিক ৮০/৯০ কেজি ওজনের একটা মহিলা।
আমারে দেইখা তার পান খাওয়া দাঁত দিয়ে একটা হাসি দিয়া কইলো,, কেডা তুমি??
আমি একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,, আপনি রোদের কে হোন?
আমি রোদের আম্মা তুমি কেডায়?
ততক্ষণে সেই ধাক্কা খাওয়া টাকলা লোকটাও চলে এসেছে। জানতে পারলাম এনারাই নাকি আমার ক্রাশের বাবা মা।
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমি মোটেও এটার জন্য পস্তুত ছিলাম না। আমার এত্তো সুন্দর হেন্ডসাম ক্রাশের বাবা মা যে এটা শুনার পর দুই মিনিট কোমায় ছিলাম।
যাইহোক ক্রাশের জন্য হলেও এইটুকু মানতেই হবে। আমি তাদের সালাম দিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললাম,,,
শাশুড়ী আম্মা আমি আপনার ছেলের প্রেমিকা। আপনাদের ছেলে আপনাদের দেখে ভয় পায়। তাই আপনাদের আমার কথা বলতে পারছিল না তাই আমিই বলতে আসলাম।
আমি তো আপনাকে দেখেই বুঝেছি আপনার শরীরের মতো আপনার মনডাও অনেক বড় তাইনা আম্মা?
ক্রাশের মা আমার দুই গাল টেনে আদর করতে করতে ঘরে নিয়ে গেলো। আর বলতে লাগলো,,, আমার মগা যে পরীর লাহান মাইয়ার লগে প্রেম করতে পারে। এইটা তো আমরা ভাবতেও পারি নাই।
আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমি কোথায় এসে পরলাম। এতো সুন্দর পোলারে কেউ মগা কয়?
পর পর তিনটা মিষ্টি আমার মুখের মধ্যে দিয়ে বললো,, তুমি বসো আমি মগারে ডেকে আনি।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম,,, ক্রাশ আমার বাড়িতে এখন কি হইবো?
কিন্তু আমি তার থেকেও বেশি হতভম্ব হলাম,, মহিলাটি যারে আনলো তারে দেইখা। ছেলেটি মহিলাটির থেকেও মোটা। বার বার তার মাকে বলছিল তার নাকি কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই।
কিন্তু আমাকে দেখার পর কইলো,,আম্মা ঠিক কইছো এইডায় আমার গার্লফেন্ড। আমি আজকেই বিয়ে করমু।
আমি এবার শিওর হলাম আমি ভুল ঠিকানায় আইছি। এখন পালামু কেমনে? এই পোলারে আমি কেন কোনো মাইয়াই বিয়া করতে চাইবে না।
কোনো মতো ঘরের ভিতরে থেকে দৌড়ে বাহিরে আসলাম। পেছন পেছন তারাও আসলো।
হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি আমার ক্রাশের সাথে দু'জন ব্যক্তি। বুঝতে পারলাম এনারাই আমার আসল শশুর শাশুড়ী। আর আমার শশুর আবার আর কেউ না আমার কলেজের ইংরেজির টিচার। এখন আমার কি হবে?
মনে মনে বললাম,আজকেই তুই শেষ রে মিশমি।
পেছন থেকে ঔ মহিলা বলতে লাগলো,, আফা দেহেন এইডা আমার ছেলের বউ।৷
আমর মান সম্মান যেটুকু ছিল তাও গেলো। আমার ক্রাশ আমার দিকে ভ্র কুচকে তাকিয়ে আছে। মনডায় চায়তেছিল পায়ের নিচে গ্রামীণ সিম লাগিয়ে বলি চলো বহুদূর!!
আমি কোনো মতো শুকনো একটা হাসি দিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম,, রং নাম্বার কইয়া দিলাম দৌড়।
পেছনে কি হলো তাকিয়ে দেখার সময় নাই। শয়তান বন্ধু গুলোরে পাইলে ছাড়মু না। এদের মতো বন্ধু থাকলে কি শত্রু লাগে?? এই রকম একটা চিড়িয়াখানার ঠিকানা দিছে।
আমি মিশমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পরি। বাবা মায়ের দুই মাত্র বড় সন্তান। বাবা হাইস্কুলের টিচার,,মা হাউজ ওয়াইফ।
পরের দিন কলেজে গিয়ে শয়তান বন্ধুদের খুঁজছি। কিন্তু একটারেও পাচ্ছি না। হঠাৎ তাকাই দেখি আমার ক্রাশ এদিকেই আসছে। আমাকে কালকের কথা যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তখন কি বলবো! ভেবেই দিলাম দৌড়।
গাছতলায় এসে দেখি আমার শয়তান বন্ধু গুলো এখানে বসে আছে।
আমাকে দেখে দিলো ক্লাসের মধ্যে এক দৌড়। পেছন পেছন গিয়ে ওদের কিছু বলার আগেই ক্লাসে স্যার চলে আসলো।
হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি আমার ক্রাশ। সে নাকি আজকে আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিবে। উনার বাবা মানে আমাদের ইংরেজির স্যার একটা কাজের জন্য কিছুদিনের জন্য বাহিরে গেছে।
হেই'ডা দেইহা মুই ভয়ে ম'রি আর মোর ক্রাশ নাকি নিবে সেই ক্লাস। ওমাগো ভাবা যায়?
সে নাকি অর্নাস ৩য় বর্ষে পড়ে ইংরেজিতে। ভাবা যায় আমার পিচ্চি পিচ্চি দেখতে ক্রাশটা এতো বড়? স্যারের ছেলে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেলো বাংলা স্যার।
যাইহোক কিছুতেই বুঝতে দেওন যাইবো না। চশমা পরলে ভালো ছাত্রী ভালো ছাত্রী একটা ভাব আসবে। তাই আমাদের ক্লাসের সব থেকে ভালো ছাত্রীর চশমা নিয়ে পরে ফেললাম। ঘু'ষ হিসেবে তারে দিতে চাইলাম ফুচকা।
কিন্তু এহন আর চোখে দেখতেছি না। খোলার আগেই আমার ক্রাশ আমারের বললো,,, হেই তুমি তোমার ইংরেজি বইয়ের দশম পৃষ্ঠা থেকে রিডিং পড়ো তো?
বই তুলে কিছু পড়ার আগেই সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো। কারণ আমি নাকি বইটা উল্টো ধরেছি।
বাধ্য হয়ে কোনো মতো চশমা খুলে পড়তে লাগলাম,,, পড়া শেষ করে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
এদের আবার হলো কি???
চলবে ???