পর্বঃ৩

1057 Words
___________ খাবার শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে রুমে আসার জন্য পা বাড়ায় বেলা।ওর একটাই ভয় যদি বিভান জেগে থাকে।তখনই ওপর থেকে বিভানের ডাক।চিৎকার করে ডাকছে বেলাকে, ''বেলা!!কি হলো কই তুমি?" বেলা কেঁপে উঠে।কিছু না বলে দাঁড়িয়ে যায় সেখানে।বিভান আবার চিৎকার করলো, ''অপেক্ষা করছি তোমার।আসছো না কেন?" বেলা এবার বলল, ''লজ্জা নেই আপনার এভাবে চিৎকার করছেন?আসছি আমি।" বেলা উঠে ধীরে ধীরে হেঁটে রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।হালকা চাপানো দরজা।বিভানকে দেখতে পেলোনা ও।দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই ওর কোমড় চেঁপে ধরে অনেকটা কাছে টেনে নেয় বিভান। বেলা ভয় পেয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে বিভান শক্ত করে ধরে বলল, '"কি হলো ম্যাম?আমি আপনার পার্সোনাল প্রপার্টি চিনতে পারছেননা?" বেলা বিভানকে ধরে বলল, ''না তেমন কিছু না।আপনি টায়ার্ড। সারাদিন খেঁটে ঘরে ফিরেন।রেস্ট নেয়া উচিৎ।" ''বেলা রাতের সময়টুকুই তোমাকে পাই।সারাক্ষন অফিসেই থাকতে হয়।অন্তত এ সময়টুকু আমাকে দিলেই পারো।" বেলার মুখ মলিন হয়ে আসে।সেটা খেয়াল করে ওকে জড়িয়ে খাটে এনে বসায় বিভান।তারপর চিবুক ধরে বলল, ''কি হয়েছে?" বেলা মাথা নেড়ে চুপ করে থাকলো।বিভান আবার বলল, ''ভালো লাগছেনা?" ''না তেমন কিছুনা।এক্চুয়ালি,,," ''জি বলো।" বেলা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল, ''আমি ও চাই আপনার সাথে কিছু সময় কাঁটাতে।আপনাকে কতোটা সময় দেখতে পাইনা।" বিভানের সুন্দর মুখটা হাসিতে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে।বেলার কোমড়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল, ''বেলা!!! " বিভানের বুকে মাথা রেখে বলল, ''জি।" ''তোমার জন্য কিছু এনেছিলাম।আজ পরতে হবে।" ''কি বলুন।" বিভান বেলাকে সরিয়ে আলমারি থেকে একটা বক্স এনে বেলার পায়ের কাছে এসে বসলো।তারপর বেলার একটা পা ওর হাঁটুর ওপর রেখে সেখানে সুন্দর একটু নুপুর পরিয়ে দিলো।বেলা হেসে বলল, ''আপনি যেভাবে বলছিলেন ভাবলাম কি না কি?তের বছর আগের কথা মনে পড়ে গেলো।সেদিন ও তো এমনই একটা নুপুর গিফট করেছিলেন।" ''হুম। পছন্দ হয়েছে?" ''খুব।" পায়ের নুপুরটিকে ছুঁয়ে বলল বেলা।বিভান এবার বেলার পাশে এসে বসে ওর চিবুক ধরে মুখটা নিজের দিকে নিয়ে আসে।বেলা চোখ বুজে বলল, ''কেন এভাবে কাছে টেনে নেন বলুন তো?এটা জানার পর ও যে কখনো মা হতে পারবোনা আমি।" এতক্ষন চোখ বুজে বেলাকে কাছে টানছিলো বিভান।বেলার কথা শুনে থেমে গেলো ও।তারপর বেলার কপালে চুমু খেয়ে বলল, ''আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সহায় অবশ্যই হোন।আমাদের ও হবে।কোন ডাক্তার বলেনি আমরা মা বাবা হতে পারবোনা।সময় লাগছে আমাদের।ও চলে আসবে।হয়ত ও চাইছে বাবা মা একটু এঞ্জয় করে নিক।আমি আসলে তো সেটা হবেনা।তাইনা?" দুষ্টু হেসে বলল বিভান।বেলা চোখ বুজে বলল, ''অসভ্য লোক।" বিভান হো হো করে হেসে উঠে।তারপরও বেলাকে জড়িয়ে নেয় ভালবাসার চাদরে।এদিকে পরদিন নিশাদের নম্বরে একটা মেসেজ আসে ওর বেতন চলে আসছে ওর এ্যাকাউন্টে।নাস্তার টেবিলে বসে মেসেজ টিকে ওপেন করলো।তারপর চা টা খেয়ে উঠে গায়ে শার্ট জড়িয়ে বাবার কাছে এসে বসে।লোকটা অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে হুমায়রা রুমাল ভিজিয়ে বাবার গা মুছে দিচ্ছে।নিশাদ বাবার কাছে এসে ওনার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ''আব্বা কি খাইতে মন চায় আপনার?" ইকরাম রহমান চোখ খুলে ছেলের দিকে তাকায়।তারপর একটা হাত এগিয়ে ছেলের মাথা স্পর্শ করে বললেন, ''তোর যেডা মন চায় আন।" ''জি আব্বা আপনি তাহলে নাস্তা খেয়ে নেন।আমি বেতন টা নিয়ে কিছু বাজার ও করে আনি।" নিশাদ উঠে যায়।তারপর ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।ব্যাংকটা অতো দূরে নয় তাই হেঁটে রওনা হলো।সেখান থেকে ২৪০০০ টাকা তুলে বাজারে এলো।দু কেজি গরু মাংস আর এক কেজি পোলাউর চাল নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।কোরবানি তে কিছু দিতে পারেনি ফেমিলিকে। আজ অন্তত ঈদের মজাটা পেতে দোষ কি?সাঁঝ টিউশানির জন্য বেরিয়েছিলো সাতটায়।ছুটির দিন তো তাই সকালে পড়িয়ে আসবে ও।রিদ্ধিকে পড়িয়ে ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে লিফটে উঠতেই রিদ্ধির মামা সাদেক সাহেবের সাথে দেখা হলো।সাঁঝ একটু হেসে সরে দাঁড়ায়।সাদেক সাঁঝের দিকে একটু সরে এসে বলল, ''বাসা কই আপনাদের?" ''কাঁঠাল বাগান।" একটু সরে এসে বলল রিদ্ধি।লোকটা আবার ওরদিকে সরে বলল, ''কি করেন আপনি?" ''অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি।" রিদ্ধি সরে আসে।লোকটা আবার দিকে আসতেই আরেকজন লোক ভিতরে ঢুকলো।সাদেক বলল, ''আপনার দাঁড়াতে প্রবলেম হচ্ছে ম্যাডাম?" সাঁঝ কিছু না বলে ওয়ালের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ায়।পাশের লোকটা সানগ্লাস পরা।তারপর ও সাঁঝের মনে হলো লোকটা ওকে আর সাদেককে দেখছে।সাদেক হেসে তাকালো সানগ্লাস ওয়ালা লোকটির দিকে।লোকটা হঠাৎ লিফটের রুলস গুলোয় তাকিয়ে বলল, ''এখানে আরেকটা রুলস থাকা উচিৎ ছিলো।" সাদেক হেসে বলল, ''মনে হচ্ছে সব রুলস আছে।" ''তবে লাগানো দরকার মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য।লিফটে মেয়েদের সাথে ভদ্র ব্যাবহার করুন।" বলে একটু হাসলো লোকটা।সাঁঝের হাসি আসলে ও মুখ লুকিয়ে নেয়।সাদেকের হাসি ছুঁটে গেলো।লোকটা আবার সাদেককে বলল, ''আপনাকে আগে দেখিনি।" ''বাহির থেকে আসছি বোনের বাসায়।" ''ওহ।তো এখানেই থাকবেন?" ''হ্যা।দুলাভাই তো আছে বাবার মতন।অন্যখানে থাকতে দেয় না।" লোজটা আবার বলল, ''ভালো।" লিফট নিচে চলে এলো।সাদেক বেরুনোর পর সাঁঝ বেরিয়ে আসে তারপরই ঐ লোকটা।সাঁঝের ইচ্ছে হচ্ছে লোকটাকে খুব করে ধন্যবাদ জানাবে।কিন্তু সাহস পায়নি।লোকটা বেশ লম্বা।মুখে খোঁচা দাড়ি আছে।গায়ের থেকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রান পাচ্ছিলো সাঁঝ পুরো লিফটে।লোকটা সাঁঝের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।সাঁঝ বাসে উঠে ঘরের জন্য রওনা হয়।এদিকে নিশাদ নিজ হাতে মাংস রান্না করবে হুমায়রা বসাতে চেয়েছিলো কিন্তু নিশাদের মতো রান্না কেউ করতে পারেনি।বিশেষ করে মাংস।তাই হুমায়রা ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।নিশাদ বড় পাতিলে পুরোটা মেখে নিচ্ছে।লাবনী শসা কাঁটছে।বিভিন্ন ডিজাইন বানাচ্ছে।সেটা দেখে কুঞ্জন বলল, ''শসা ব্যাথা পাচ্ছে আরো আস্তে কাঁট।কোন কাজেরই না।" লাবনী মুখ উঠিয়ে ভেঁংচি কাঁটতেই আদনান খালি গায়ে বেরিয়ে এসে বলল, ''লাবনী তুই ছুড়ি ধরেছিস কেন?হাত কাঁটবে তোর।" ''না ভাই কাঁটবেনা।তুই বোস নাস্তা দিচ্ছি।" ''তাড়া হুড়া করবিনা আস্তে কাঁট।" লাবনী কেঁটে উঠে দাঁড়িয়ে কুঞ্জন কে ভেংচি দিয়ে পাকঘরে চলে গেলো।কুঞ্জন বাহির থেকে বলল, ''চুড়েল একটা।" ভিতর থেকে লাবনী কান্না করে বলল, ''বড় ভাইয়া দেখ৷ না কুঞ্জন ভাইয়া কি করছে?" নিশাদ চুুলায় মাংস দিয়ে বলল, ''ও বললেই কি তুই হয়ে গেলি না কি গাঁধি?" লাবনী আদনানের নাস্তা নিয়ে এলো।আদনান বলল, ''ভাই কি করে?" লাবনী হেসে বলল, ''ভাইয়া মাংস এনেছে।রান্না করছে।" ''ওহ।সাঁঝ কই?ভাইয়া কেন রান্না করছে?" ''আপু টিউশানিতে গেছে।" ''ওহ।তোরা খেয়েছিস?" ''হুম।" সাঁঝ ঘরে ঢুকেই রুমে গিয়ে দরজা লাগায়।ভীষন ভয় পেয়েছিলো লিফটের ভিতর।ভাগ্যিস লোকটা ঢুকেছিলো নয়ত বাজে কিছু হতে পারতো ওর সাথে। কাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসতেই জুলেখা বানু বলল, ''পোলাউ বসায় দেয় সাঁঝ।তোর ভাইয়ে মাংস চড়ায় দিছে।" সাঁঝের বেশ ভালো লাগলো।উড়না কোমড়ে বেঁধে পাকঘরে আসতেই দূর্দান্ত ঘ্রান ওর নাকে এসে লাগে।ভাইয়ার রান্না করা মাংস কষে য়াওয়ার আগেই সুগন্ধ ছড়ায়।হুমায়রা মাংস নাড়ছে।সাঁঝ পোলাউয়ের চাল ধুয়ে দিতে দিতে বলল, ''তোর রেজিস্ট্রেশন কালকে না?" ''জি আপু।ভাইয়া টাকা দিছে।" ''হুম।দেখ মন দিয়ে পড়াশুনা কর।তাহলে ভাইয়ার কষ্ট গুলো অনেকটা কমে যাবে।" সারাবাড়ি পোলাউ আর মাংসের ঘ্রানে মৌ মৌ করছে।লাবনী আর কুঞ্জন খাওয়ার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। বাবাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে সাঁঝ আর আদনান।তারপর সবাই বসে যায় খেতে। খাওয়ার মাঝেই জুলেখা বানু কেঁদে উঠে।খেতে পারেননা ওনি।ইকরাম রহমান রেগে তাকায় স্ত্রীর দিকে।জুলেখা বানু উঠে রুমে চলে এলেন।সাঁঝ ও চলে আসে মায়ের পিছু পিছু। সাঁঝ বলল, ''আম্মা খায় নাও।কি হইছে তোমার?" ''কেমনে খামু কও?আমার মাইয়াডা কি খাইছে ন খাইছে আর আমি পোলাউ খাইতাছি।" সাঁঝ আবার বলল, ''ভাইয়া শখ করে মাংস রান্না করছে। একটু খাও।আপুরে ভিডিও কল দিয়া দিবো নে। " ''সত্যিই দিবি তো?" কান্না জড়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন জুলেখা বানু।সাঁঝ বলল, ''দিবো এবার চলো তুমি।" মাকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে এলো সাঁঝ।সবাই মিলে খেয়ে নিলো। চলবে
Free reading for new users
Scan code to download app
Facebookexpand_more
  • author-avatar
    Writer
  • chap_listContents
  • likeADD